সরকারের পরিসংখ্যান দিয়ে এই পটভূমি শুরু করা যাক। বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ (গ্লোবাল পিস ইনডেক্স-২০২৪ অনুসারে) দেশের তালিকায় শীর্ষ দুই দেশ আইসল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে জনসংখ্যা ৩ লাখ ও ৫৩ লাখ। মজার ব্যাপার হলো, এই দুই দেশে যে পরিমাণ জনসংখ্যা আছে, এর চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আছে বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত) বিদ্যালয়গুলোয়। এই সংখ্যা ৮১ লাখের বেশি। আর এইচএসসিতে (একাদশ ও দ্বাদশ) শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ।
এর বিপরীতে শিক্ষকের সংখ্যা খুবই কম। সরকারি হিসাব অনুসারে, প্রতি ৩৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক আছেন একজন। আর এর মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক মাত্র ৭২ শতাংশ। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যে রুগ্ণ, এসব পরিসংখ্যান থেকেই সেটা বোঝা যায়।
এই চিত্র যে আরও ভয়ংকর, সেটা ধরা পড়ে মফস্বল ও গ্রামের বিদ্যালয়গুলোয়। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসি) শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব নেওয়ার আগপর্যন্ত মফস্বল ও গ্রামের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের চিত্র আমাদের সবারই কমবেশি জানা। এনটিআরসি দায়িত্ব নেওয়ার আগপর্যন্ত এসব নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা ছিল। দক্ষতা উন্নয়নে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ঘাটতি ছিলই। এই ঘাটতি এখনো আছে।
অর্থাৎ শিক্ষাব্যবস্থার জন্য যেমন শিক্ষক দরকার, তেমন শিক্ষক সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার আমাদের প্রচলিত বেতনকাঠামোর কারণেও ভালো মানের শিক্ষক পাই না। কারণ, দেশের অধিকাংশ মেধাবী শিক্ষার্থী মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতে চান না। এর অন্যতম কারণ পারিশ্রমিক।
একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, দেশের প্রান্তিক এলাকায় বিদ্যালয়গুলোয় ইংরেজি, গণিত এবং বিজ্ঞানের বিষয় ভালোভাবে পড়ানোর মতো শিক্ষক হাতে গোনা। এ কারণে ‘প্রাইভেট’ বা ‘কোচিংয়ে’ যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। আবার এসব ক্ষেত্রেও রয়েছে বিপত্তি। ওই প্রাইভেট কিংবা কোচিংয়ের শিক্ষকেরা এসএসসি বা এইচএসসি পাস করানো কিংবা এতে ভালো ফলের নিশ্চয়তা দিয়ে পড়ালেও শিক্ষার্থীর মৌলিক ভিত্তি মজবুতে নজর দেন না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় গিয়ে বিপত্তিতে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা শুরু করছি ‘স্পৃহা এডুকেশন কেয়ার’। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, শিক্ষার্থীর মৌলিক ভিত্তি মজবুত করা। এসএসসি কিংবা এইচএসসির শিক্ষার্থীকে আমরা এমন ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিতে চাই, যাতে পরবর্তী শিক্ষাজীবনে একজন শিক্ষার্থীকে অথই জলে সাঁতার কাটতে না হয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়—বুয়েট (গণিত, আইসিটি, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান পড়ানোর জন্য), সরকারি মেডিকেল কলেজ (জীববিজ্ঞান পড়ানোর জন্য) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইংরেজি পড়ানোর জন্য) শিক্ষার্থীদের এই সহায়ক শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত করা হয়েছে। এই শিক্ষার্থীরা নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশের শিক্ষার্থীদের পড়ান।
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সরকারি মেডিকেল কলেজে খুব অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী পড়েন। এই শিক্ষার্থীদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ খুব কম পায় এসএসসি কিংবা এইচএসসি পড়ুয়ারা। আমরা সেই প্ল্যাটফর্মটাই গড়ে দিয়েছি।
স্পৃহা একটি নলেজ শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা তাঁদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন এসএসসি কিংবা এইচএসসি পড়ুয়াদের সাথে। উদ্দেশ্য এই এসএসসি কিংবা এইচএসসির শিক্ষার্থীদের ভিত্তি মজবুত করা।